প্রকাশিত: ১১/০৮/২০১৫ ১০:২৪ অপরাহ্ণ

অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সরকার
মামলা-মোকদ্দমার মধ্যে রয়েছে ধ্বংস ও নিরাময়ের শক্তি। কেননা কেউ কেউ মামলা করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে, আবার কেউ অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এটা এমন এক শক্তি যা আমাদের এবং আমাদের সমাজের মাপকাঠি। এ শক্তি যেমন স্বামী ও স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে তেমনি পরস্পরকে আইনি বাধ্যবাধকতা পালনের বিষয়টি পরিষ্কার করে দেয়। সঙ্গত কারণে একজন মানুষ অপরজনের প্রতি দৃষ্টিপাত করে। আবার কখনো কখনো মুখ ফিরিয়ে নেয়। যদিও এটা দারিদ্র্যকে প্রসারিত করার ক্ষমতা রাখে, ধনীকে দরিদ্র করতে পারে। শক্তিবান ও শক্তিহীন সব শ্রেণিকেই পদানত করতে পারে, তথাপিও এ প্রক্রিয়া একজন অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসম্মান ও অবমাননার চিরস্থায়ী অবসান ঘটাতে পারে। আমাদের সমাজে মামলা-মোকদ্দমার ধ্বংসকারী ক্ষমতা মামলায় জড়িয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা তীব্রভাবে অনুভব করতে পারে। বিশ্বাসে অনীহা, কল্পনায় অস্বীকার এবং অন্ধকারাচ্ছন্নতা সবকিছুই এ শক্তির প্রতি যুক্তিসঙ্গত প্রতিক্রিয়া। এসব শক্তি এবং দালালদের দৌরাত্দ্য এমন কিছু সৃষ্টি করে যাকে নীরবতায় ষড়যন্ত্র বলা যেতে পারে। যখন কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবার মামলায় জড়িয়ে পড়েন তখন এক অভাবনীয় দৃশ্যের উন্মোচন হয়। মামলায় জড়িয়ে পড়া পরিবারের সন্তানরা যখন জানতে পারে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ মামলায় আক্রান্ত অথবা কারাগারে বন্দী রয়েছে তখন তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত হয়। তাদের কী হবে? তারা যাকে ভালোবাসে মামলা তাকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। একে একে সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ শেষ হয় মামলা পরিচালনা করতে করতে। দুঃখ এমন প্রচণ্ড ও অবর্ণনীয় হয় বেঁচে থাকা তখন হয়ে ওঠে কঠিন। যন্ত্রণা নিয়ে তারা জীবনধারণ করতে পারে না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বা পিতার কারাগারে থাকার কারণে শিশুসহ পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। যদি তাদের সাহায্য করা বা ভালোবাসার কেউ না থাকে এমনকি রাষ্ট্রও যদি এগিয়ে না আসে তাহলে তারা পথের ভিক্ষুকে পরিণত হয়, শহরের মধ্যে ভেসে বেড়ায়। পথ থেকে কুড়িয়ে খেয়ে বেঁচে থাকে। কেউ পতিতা পেশা গ্রহণ করে এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহনের জন্য চুরি-রাহাজানির মতো কাজে লিপ্ত হয়। অর্থাৎ অপরাধপ্রবণতা বাড়তে থাকে আর তখনই ধ্বংস অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। আইন ব্যবস্থা যেটা গরিবদের জন্য কোনো অস্ত্রই নয় এবং মামলায় পতিতদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা, এ দুটো ধারণারই আজ পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্পর্কিত আলোচনায় মসজিদ, আইনজ্ঞ এবং বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কিন্তু তাদের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। সবাই জড়িত থাকবে এবং সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। ন্যায়নীতি, অধিকারবোধকে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সমর্থনের নৈতিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। যেসব প্রথা নারীর ক্ষমতা হরণ করে সেগুলোর পরিবর্তন। নারীর উত্তরাধিকার, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বলাৎকার এবং যৌতুকসহ সব গরিব মানুষকে আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

পরিবার এবং বিদ্যালয়ে গঠনমূলক আইন শিক্ষার অভাবের কারণে ছেলেমেয়েদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যায়। ফলে পরিবার থেকে সমাজ এমনকি রাষ্ট্র ও জাতিকে এর ফলাফল ভোগ করতে হয়। তবে আশার কথা এই যে, আমরা এমন এক জাতি, যারা বাঁচতে জানি। দুর্যোগের মধ্যেও সঠিক স্থানে ফিরে আসতে পারি। এটা সেই সর্বব্যস্ত গুণাবলী, যা মানব হৃদয়ের এক চিলতে আশাকে যুক্তিসঙ্গত করে, হাসিকে করে বৈধ। দুর্ভাগ্যকে মানিয়ে চলার এটা একটি অসাধারণ গুণ। আইন তার চেয়ে কিছু বেশি। এটা একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি, যা বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। যার ফলে অনেক কিছুই বদলায়। যা আছে, যা হওয়া উচিত, তা-ই হয়। আইনের এ ক্ষমতা নীরবতাকে, ভয়কে, স্বীকার করার অক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। মামলা-মোকদ্দমার এ অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাব থাকা সত্ত্বেও, যেখানে রাষ্ট্র সাধারণ গরিব বিচার প্রার্থীদের মামলার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়, যেখানে বারবার আশার আলো জ্বলে ওঠে। যেখানে ব্যক্তির জন্য রয়েছে আইনি সুরক্ষা, গরিব মানুষের জন্য রয়েছে উদ্বেগ যেখানে ভয় পরাজিত। সেখানে রাষ্ট্র স্বয়ং আরেকজন মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়। এই আশা অবাস্তব নয় বরং বাঁচার আগ্রহ ও আইনগত অধিকার একইভাবে গ্রথিত। এখন উচ্চৈঃস্বরে কথা বলার সময় এসেছে, সময় এসেছে গরিব ও অসহায় মানুষের নীরবতা ভাঙার। এর মধ্যেই মিলিত হওয়ার ভিত সৃষ্টি হবে। সত্য বড় কঠোর। নীরবতার মাঝ দিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এ সত্য অধিকতর কষ্টকর হয়। যখন তার সঙ্গে থাকে প্রত্যাখ্যান, অবমাননা এবং অশ্রদ্ধা। সব ধরনের অশ্রদ্ধা ও প্রত্যাখ্যানকে দূরে ঠেলে দিয়ে লিগ্যাল এইড গরিবের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এমন এক সংস্থা যেখানে গরিব মানুষ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে, স্বপ্ন দেখবে, চিন্তা করবে এবং অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সিঁড়ি খুঁজে বের করবে। এ অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরু করার মধ্যে রয়েছে আত্দআবিষ্কার, শক্তি সংগ্রহ, আত্দজিজ্ঞাসা। এক কথায়, ন্যায়বিচার অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে জানার যাত্রা। এই যাত্রা গরিব অসহায় ব্যক্তি ও সম্মিলিত দুর্বল জনগোষ্ঠীর স্বপ্নের যাত্রা এবং ধ্বংসকে পেছনে ফেলে নিরাময়ের শক্তি হিসেবে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে সফল করতে হবে।

লেখক : আইনজীবী এবং আইনবিষয়ক ছোট কাগজ ‘পঞ্চায়েত’-এর সম্পাদক।

পাঠকের মতামত

  • ২০ রমজানের মধ্যে সংবাদ মাধ্যমে কর্মরতদের বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবি বিপিজেএফের
  • ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত
  • হিমায়িত মাংস ও দুধ খাওয়ার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা সপ্তাহ
  • সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক
  • বৌদ্ধ তারুণ্য সংগঠন- সম্যক এর ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
  • টেকনাফে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
  • টেকনাফে পুলিশের অভিযানে ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার
  • কর্মক্ষেত্রে অনন্য কক্সবাজারের একমাত্র নারী ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন
  • টেকনাফে অর্ধডজন মামলার আসামি ডাকাত আবুল খায়েরসহ গ্রেপ্তার-২
  • ১৫ ঘন্টা পর ট্রলারসহ ৫৬ জেলেকে ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী
  • সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক

    সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক

      আব্দুস সালাম, টেকনাফ:: সাগরপথে টেকনাফের বাহারছড়ায় মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গাকে ...